আবু বক্কার সিদ্দীক, মণিরামপুর থেকে: যশোরের মণিরামপুরে জমি লিখে না দেওয়ায় বৃদ্ধ মাকে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে স্বামীর ভিটা ছেড়ে বৃদ্ধা তার এক বিধবা মেয়েকে আশ্রয় নিয়েছে ভাইয়ের সংসারে।
প্রায় ২৫ বছর আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে মৃত্যু হয় স্বামী বাদল মোড়লের। মৃত্যুর সময় স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে এবং ভিটেমাটিসহ পাঁচ বিঘা জমি রেখে যান তিনি। সেই থেকে বিধবা স্ত্রী বুলুজান বিবি (৮০) অতিকষ্টে সন্তানদের মানুষ করে তাদের বিয়ে দিয়েছেন। ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আকবর আলী একটি বেসরকারী ব্যাংকে সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করেন। আর ছোট ছেলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রয়েছেন মালয়েশিয়াতে। কিন্তু স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটামাটিসহ পাঁচ বিঘা সম্পত্তিই এখন কাল হয়ে দাড়িয়েছে বিধবা বুলুজানের জীবনে।
অভিযোগ রয়েছে জমি লিখে না দেওয়ায় বড় ছেলে আকবর আলী বিধবা মা-বোনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বড় ছেলে মায়ের একটি বড় গাভী কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। স্বামীর ভিটে থেকে উচ্ছেদ হয়ে বুলুজান তার মেঝমেয়ে বিধবা আমেনাকে নিয়ে এখন ঠায় নিয়েছে দরিদ্র ভাই মোবারকের বাড়িতে। বুলুজানের আক্ষেপ এমন কুলাঙ্গার ছেলে জন্ম দেওয়ায় তার আজন্মের পাপ হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের হাসাডাঙ্গা মেঠোপাড়া গেলে কৃষক মৃত বাদল মোড়লের স্ত্রী বুলুজান বিবি (৮০) জানান, স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটেমাটিতে সন্তানদের অতিকষ্টে মানুষ করে চারজনকে বিয়ে দেন। ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে ছোট ছেলে অবিবাহিত আজগার আলীকে প্রায় ১৫ বছর আগে মালয়েশিয়া পাঠান। আজগার আলী বিদেশ থেকে প্রতিমাসে তার বড়ভাই আকবর আলীর কাছে টাকা পাঠাতো। সেই টাকা দিয়েই বুলুজানের সংসার চলতো। কিন্তু বিয়ের দুই বছর পর সন্তান সম্ভাবনা স্ত্রীকে নিয়ে বড় ছেলে আকবর তার মাকে ফেলে চলে যান কেশবপুরে শ্বশুর বাড়িতে। আকবর আলী শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে থেকে কেশবপুর বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করেন। এদিকে বুলুজানের মেঝ মেয়ে নিঃসন্তান আমেনা খাতুনের স্বামীর মৃত্যু হয়। ফলে আমেনা খাতুন তার মায়ের কাছে ঠাই নেন।
বুলুজান জানান, শ্বশুর বাড়ি থেকে দীর্ঘ ১০ বছর পর বড় ছেলে আকবর আলী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আবার বাড়িতে আসেন। কাঁচা বাড়ির তিনটি কক্ষের মধ্যে আকবর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুইটিতে বসবাস করেন। বুলুজানের অভিযোগ বড়ছেলে সেই থেকে তাকে (মা)এবং বোনকে ভোরপোষন করেন না। ফলে গরু-ছাগল পালন এবং বিঘা দুয়েক জমি বর্গা দিয়ে যে টাকা পান সেটা দিয়ে মা-মেয়ের সংসার চলে আসছিল।
বুলুজান অভিযোগ করেন, বিদেশ থেকে ছোট ছেলের পাঠানো ১০ লাখ টাকা ইতিমধ্যে বড় ছেলে আত্মসাত করেন। ফলে ছোট ছেলে এখন টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। এরই মধ্যে বড় ছেলে আকবর আলী তার নামে জমি লিখে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু মা তাতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে আকবর আলী ইতোমধ্যে তার মা’য়ের একমাত্র সম্বল গাভিটি কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। আর এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে আকবর আলী তার মা এবং বোনকে বাড়ি থেকে গত আগষ্ট মাসে বের করে দেয়। স্বামীর বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার পর কোন উপায়ন্ত না পেয়ে বুলুজান বিবি তার মেয়ে আমেনাকে নিয়ে ঠাই নেন একই গ্রামে তার ভাই মোবারক মোড়লের বাড়িতে।
বুলুজান বিবি কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার চেয়েও সঠিক বিচার পাইনি। তাই বাধ্য হয়েই আপনাদের কাছে (সাংবাদিকদের) অভিযোগ করেছি।
বুলুজানের ছোটভাই মোবারক মোড়ল জানান, তিনি নিজে অতিদরিদ্র হলেও আপন বোন-ভাগ্নিকে তো তাড়িয়ে দিতে পারিনা। মোবারক মোড়ল অভিযোগ করে বলেন এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করতে প্রতিনিয়ত আকবর আলী তার মা এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের মোবাইলে ফোন দিলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি জানান, জমিজমার লোভে গর্ভধারিনী মাকে তাড়িয়ে দেওয়া কুলাঙ্গার ছেলের উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত। তবে তাড়িয়ে দেওয়াসহ আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে আকবর আলী জানান, তার মা অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেন জানান, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে তাৎক্ষনিকভাবে ছেলেকে আইনের আওতায় আনা হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।